শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়..ফিরে আয়..

****২০০৮ এ তাকে হারিয়ে ফেলেছি, আজ আবার হঠাৎ করেই  সে ফিরে এলো স্মৃতিতে, মনে পড়লো তার কথা, হারিয়ে গ্যাছে হৃদ্‌স্পন্দন, ফিরে পাইনি সে বনের হরিণকে। হয়তো আর কক্ষনো পাবোনা।****


ফিরে আয়, দয়া কর, ফিরে আয় সোনা .....

লেবেঞ্চুস কাঠি লজেন্সেও হবেনা তোর বুঝতে পারছি... ...

আচ্ছা সবচেয়ে দামি বেলজিয়ান ক্রীমে মোড়া চকোলটটাই দেবো তোকে, যেটা মুখের ভেতর গলে যাবে তোর .. তুই আমার কাছে একবার ধরা দে, আমি যেরকম করে রিশ এর কোলে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকি নরম আদুরে বেড়াল ছানার মত। আর রিশ যেভাবে আদর করে আমাকে সারা গায়ে হাতড়ে, হাঁটুর নীচে কাফ মাসলটার ঠিক যেখানে ব্যথা সেখানে আ-স্তে করে চাপ দিয়ে -- উহ্ -- আমি একদম গলে যাই - আমি তোকে ঠিক ওইরকম করে আদর করবো সোনা, ঠিক ও ই রকম করে সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেবো।

আমার হলদে মলাটের শক্ত কাগজের খাতা তোর পছন্দ হয়নি, বেশ তো আজই অফিস থেকে এনেছি সুন্দর হালকা নীল মলাটের মাঝে বাঁধাই অনিয়ন স্কিন পেপারের নোটবুক ... কি- ই সুন্দর, দেখলে তুই খুশিতে লাফিয়ে উঠবি! তুই একটু কাছে আয়। আমি সবচেয়ে দামি কলমের মোটা কালো নিব দিয়ে গভীর করে লিখবো তোর কথা, গড়বো তোকে ...... কালো অক্ষর গুলো মুক্তোদানার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেবো নীল মেঘের দলের মাঝে, তুই একটা একটা করে পাঁপড়ি মেলার মতো আমার হাতের ভেতর পদ্মকোরক হয়ে ফুটবি, হ্যাঁ - ঠিক ও ই স্থলপদ্মের মতো, বহু বহু বছর আগে ছোট্ট মফঃস্বল শহরের বাড়িটায় শুধু আমার জন্য যে পুকুরটা ছিলো, যার পাড় আঁকড়ে আমার প্রথম সাঁতার কাটতে শেখা, আর যেটার জলের মাথায় প্রথম দেখেছিলাম সাপের ফণা উঁচোনো...... সেই বাড়িটার দেয়াল ঘেঁষে নিষিদ্ধ জংলার ধারে ওই গরবিনী পদ্মের সারি, কি এক অমোঘ আকর্ষণ ছিলো আমার - তোকে ঠিক ও ই রকম, সবাই ঘুমিয়ে যাওয়া ঝিম্ ধরানো দুপুর বেলায় বুনো ঝোপের ভেতরের জংলা গন্ধে স্থলপদ্মের সারির মধ্যে চাই আমি......

সোনা আমি জানি তুই সবার জন্য নোস্, আমি জানি তোর আত্মাভিমান, জানি আমার ওপর তোর অসহ্য রাগ ক্রোধ বেদনার কথা - আমি জানি তুই কেমন বেঁকেচুরে গেছিস্, প্রতিবার গভীর রাতে কাজ থেকে ফিরে আমি যতবার কাগজের ওপর খসখস করে লিখে গেছি নির্দয়ভাবে, তুই অভিমানে চেয়ে ছিলি আমার দিকে, তারপর নিজের ওপর অন্ধ ক্রোধে ছুঁড়ে ফেলেছি পাতাগুলো, টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দিয়েছি আমর ছোট্ট ব্যালনকিটা থেকে। কখনো বা ফিশ বোলের মাছেদের সঙ্গী হয়েছিস তুই কাগজের নৌকো ভাসিয়ে।

স্বার্থপর বেনিয়ার দু'পয়সা লোভের মত নির্লজ্জ আমি গভীর রাতে অচেতন ঘুম থেকে রিশ্ কে ডেকে তুলে ঠোঁটে মুখে গায়ে ওর আদর মাখতে মাখতে শরীরের উন্মাদনায় হারিয়ে যেতে যেতে, নাহ্ একবারও ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি তো তোর কথা! যখন আমার পিঠের ভেতর হাজারটা পিঁপড়ের সারির মত রিশের কুশলী আঙুলগুলো খেলা করে যাচ্ছিলো, যখন ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজ আর বিজাতীয় ভাষার খবরে আয়েসী সকাল আমার, রাতের খাবারে ব্যারামুন্ডি নাকি স্যামন ফিলেট বেবি স্পিন্যাচ নাকি পেনফোল্ডস এর ক্লাব পোর্ট - এ সমস্ত অর্থহীন জিনিসেও কি ভীষণ রকম সময় নষ্ট করেছি রে লক্ষী!

তোর মুখে আওয়াজ নেই, কিন্তু আমার শত্রুও বোবা বলবে না তোকে। তুই যখনই পারিস্ উঁকি দিয়েছিস। বলেছিস্ তোর অভিমানী ফোলানো ঠোঁট আর তুলতুলে আঙুল তুলে, ছিঁড়ে খুঁড়ে ফালা ফালা করেছিস্ আমার দিনের শান্তি, রাতের ঘুম।

অবহেলা? এত করেও পারিনি। তীব্র পিঠ ব্যথায়, অফিসে সদা সতর্ক চাকরি হারাই হারাই ভয়ের মধ্যেও, ট্রামের দুর্গন্ধওয়ালা ভারতীয় ছেলেটার বগলের কটু গন্ধের কদর্যতায়, কিংবা সকালের দাঁত মাজার ছোট্ট অবকাশেও একটু করে চড়ুই পাখির মত দেখা দিয়েই তুই ফুড়ুত!! তুই জানিয়ে গেছিস্, তুই খুব মিষ্টি আর খুব প্রার্থিত একজনা, কিন্তু তুই অধরা।

মা ফোন করেছিলো সেদিন, ভাবতে পারিস্? কত্তদিন পর!! তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি বেভুল হয়ে এমন ভাবে রিশের কথা বলছিলাম, থতমত খেয়ে গেলাম। খুব লজ্জা পেলাম, জানিস? তুই, যে আমার সবচে' আপনার জন, আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা, বেমালুম ভুল মেরে দিয়েছিলাম ক'মুহুর্তের জন্য। আমার ওপর তোর অভিমান তখন থেকেই শুরু তাইনা?

আচ্ছা বাবু, তোকে বেড়াতে নিয়ে যাই চল্ বোট্যানিক্যাল গার্ডেনে। ওই যে ঘনঘোর বর্ষার ওই দিনটা, আমি আমার প্রিয় কানবাজনা টা নিয়ে ছাতা বগলে চলে গেলাম আর ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই ফার্নের সারি আর বুনো স্বাদের টক টক পাতা গুলো চিবুতে চিবুতে --উফ্ দারুণ একটা আ্যডভেঞ্চার হলো তোতে আর আমাতে। সেদিনটায় কিন্তু আমি একবারও তোর কাছ ছেড়ে যাইনি, বল্? কেমন কেমন করে আমাদের দু'জনের রাগ অভিমান সব গ-লে জল হয়ে গেলো, কালো রাজহাঁস গুলোকে রুটি খাইয়ে আর ওই বীভৎস কালো মাগুর মাছ গুলোকে জলের নীচে খোঁচাখুঁচি করেই হি হি হি। সেদিন তোর হাসিটা এত্তো মিষ্টি ছিলো, এত্তো মিষ্টি .. ইচ্ছে হচ্ছিলো টপাস্ করে জড়িয়ে ধরে তোকে একটা চুমো খাই। এটুক শুনেই চোখ গোল করলি? সত্যি সোনা, তোকে আমর আদর লাগে, সব সময়, সারাটা ক্ষণ। তুই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছিস বলেই ভাবিস না রিশ্ আমার সবটুকু নিয়ে নিয়েছে,চেষ্টা করেছে হয়তো, কিন্তু চুপিচুপি জানিয়ে রাখি তোকে ...পারেনি ।।
নিতে পারেনি।।

পরাণের গহীন ভিতর - তুই ই ছিলিস, তুই ই আছিস।

আমার নিষিদ্ধ সুখের মতো, আমার দুপুরবেলায় স্কুল পালিয়ে ছাদে গিয়ে সারি করা আচারে বয়ামের ভেতর জিভ ডুবিয়ে দেবার মতন, যখন রিশের চোখ এড়িয়ে বাথরুমের সুগন্ধী বাথটাবে বুদবুদের ভেতর আমি উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা খুঁজি, শীর্ষসুখের অতল স্পর্শ করে আমায়, আমি তোকে খুঁজে পাই। তুই না হলে শ্বাস নেবার কষ্ট হয় তো আমার, দম আটকানো খাঁচা বন্দি পাখি হয়ে যাচ্ছি দেখতে পাচ্ছিস্ না? ভাগ্যিস তুই ছিলি সোনা, নইলে আমি মরেই যেতাম।

তুই বার বার রাগ করে পালিয়ে চলে যাস্, এবার তো ভেবেছিলাম আর ফিরেই আসবিনা, তারপরও অদম্য একটা ইচ্ছে কেন ছটফট করে ভেতরে, তোকে জাপটে ধরে রাখি, কিছুতেই যেন তুই ছুটতে না পারিস্, তোকে হাতপা বেঁধে আঁকড়ে ধরে গুনে গুনে পঞ্চাশটা হামি দেবো, তোকে সাথে নিয়ে ড্যানডেনং পাহাড়ের চূড়োয় যাব (না, যাইনি, রিশ্ কে নিয়ে সত্যিই যাইনি, হিংসে করিস না ভূত কোথাকার!) ও ই শিশির মাখা টুকটুকে লাল ফুলটা পাঁপড়ি মেলে শুধুই যে পাহাড়ের হিমের আদরে, হ্যাঁ, শুধু তোকে দেব সোনা, লক্ষী মানিক আমার, শুধু তোকে, সুন্টুনি মুন্টুনি। রাগ করিস্ না আর মুখ ফিরিয়ে থাকিস্ না। অনেক পাওয়ার মাঝেও আমার সবচে' বড় না পাওয়া হয়ে যাস্ না তুই।

ভয় পাস্ না: রিশ্ কে নেবোনা; দেখিস্ তুই, যেভাবেই হোক্ ওর চোখ ফাঁকি দেবোই আমি এবার। শুধু তুই আর আমি নিশ্চিন্দিপুর ... অনেক দূর ...

কবিতা আমার, লেখা আমার, ফিরে আয় সোনা, প্লীজ!



 ১৭ই মে,২০০৮: দুপুর ১টা ৫৯মি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন