শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০১৫

অভিজিৎ রায় স্মারক ১ - "বিজ্ঞান চাই, বিজ্ঞানবাদিতা চাইনা" পাঠ প্রতিক্রিয়া

“ব্যধিই সংক্রামক, সাস্থ্য নহে।” কথাটা আবারো মনে পড়লো ফরহাদ মজহারের নতুন একটা লেখায় চোখ আটকে যাওয়ায়। ফরহাদ মজহার তথা বরবাদ মগবাজারের মতো নীচ, সুবিধাবাদী,জামাত তোষণকারী, হেফাজতের ভাবগুরু, পতিত, সর্বার্থে ভণ্ড, হাওয়া বুঝে পাল তোলা কলমজীবীর লেখা নিয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয়না। কিন্তু অভিদা’র মৃত্যুর পর এই লোকটির বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বিচারিতা আর ভণ্ডামির একটি নমুনা দেখে আক্ষরিক অর্থেই বাক্‌রহিত হয়ে গেছি। 

বিজ্ঞানমনস্কতার বিরুদ্ধে এইভাবে খড়্গহস্ত হওয়া থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, অভিজিৎরায় আর তার সমমনা মুক্তমনাদের কী ভীষণ বেশি প্রয়োজন এই দেশে। লেখাটির প্রতিটি পরিচ্ছদ স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ, মাঝে মাঝে মনে হয়, হি ওয়াজ অন সাম সর্ট অফ ড্রাগস যখন এটা লিখছিলেন। “বিজ্ঞানমনস্কতা” র বিপরীতে “বিজ্ঞানবাদিতা” শব্দগুচ্ছ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এটিকে মার্ক্সবাদ বা অন্য কোনো বাদ বা ইজম এর সাথে তুলনা করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে করেছেন, “সূর্য না, বরং পৃথিবীটাই সূর্যের চারদিকে ঘোরে-বিজ্ঞানের এই সত্য আধুনিক মানুষের দাপট, আধিপত্য ও সাফল্যের কারণে সিধা সরল সাধারণ মানুষ মেনে নেয়” এই জাতীয় মিথ্যা সগৌরবে প্রচার করেছেন এবং তার মাধ্যমে “সিধা সরল সাধারণ মানুষ”রা পুরাণের সূর্যদেবের মাহাত্ম্য না বুঝতে পেরে কী ভীষণ দার্শনিকতা মিস্‌ করছেন জীবনের সত্যে আর বিজ্ঞানের সত্যে একটা বিশাল ফারাক তৈরী হওয়ায়-সে দুঃখে তিনি কাতর। 

আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আরও ভয়ঙ্কর কথা বলেছেনঃ “কতো সহজে আমাদের কৈশোর বিজ্ঞানের হাতে নিহত হয়েছে। কতো কিশোর কিশোরী বিজ্ঞানের নামে শহিদ হচ্ছে প্রতিদিন কে তার খবর রাখে? তারপর সমাজে যখন এই হতাহতের ঘটনা ভিন্ন এক ব্যাধি হিসাবে ধরা পড়ে ততোদিনে দেরি হয়ে যায়।” চারপাশে তো ধর্মান্ধতার নামেই এখন পর্যন্ত সবগুলো খুন হতে দেখলাম। কোথায় সেসব অগুনতি কিশোরদল যারা বিজ্ঞানের পদতলে নিহত হল, আহ্‌ চুক্‌চুক্‌! লেখাটা পড়লে মনে হয় ক্লাস টেনের কোনো স্ট্রিট-স্মার্ট জামাতি স্কুলবালক “বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ” এই রচনা লিখতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে হাবুডুবু খাচ্ছে, কোন্‌টা লিখলে ভালো নম্বর পাবে সেই দুশ্চিন্তায় একেক বার একেক কথা বিড়বিড় করছে। 

বিজ্ঞানের সমস্ত অর্জনকে স্বীকার করতে বাধ্য হলেও ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বলতে চেয়েছেনঃ“বিজ্ঞানের এই সন্ত্রাস ভয়ানক। বিজ্ঞানের সম্ভাবনা বা অর্জন এখানে তর্কের বিষয় নয়।” ইসলামিক মৌলবাদীরা থাবা বিস্তার করেছে দেশের আনাচে কানাচে। মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা স্বভাবতঃই কোণঠাসা। যুক্তি,বুদ্ধি, চিন্তার মুক্তি যেখানে অত্যাবশ্যকীয় সেখানে বরবাদ মশাই “সন্ত্রাস” খুঁজে পেয়েছেনশুধুমাত্র বিজ্ঞানে। কি চমৎকার!! নানা অং বং চং আউড়ে শেষাবধি যেখানে স্থিত হয়েছেন এই সং সেটা হলোঃ“বুদ্ধি চাই, কিন্তু বুদ্ধিসর্বস্বতা নয়, কারণ অতি বুদ্ধি আমাদের বুদ্ধিমান নয়, আহাম্মকে পরিণত করে।অতি বুদ্ধির গলায় দড়ি কথাটা বোধ হয় এ কারণেই আমরা বলি।” হায়, অতিবুদ্ধি যে তার নিজেকেই সবচাইতে বড় আহাম্মকে পরিণত করেছে এ কথাটা কেউ তাকে বলার অবকাশ পাননি বোধহয়। 

মাত্র ক’দিন আগেই এক অর্বাচীনের স্ট্যাটাসে “বিবর্তনবাদ মানে আমরা সবাই বাঁদর ছিলাম, বাঁদর কেন এখনো আছে” এই জাতীয় কিছু গর্দভ বাক্য দেখে অনেকে তাকে রগড়েছেন, খুব সংগতভাবেই। বরবাদের মতো নয়া কৃষি আন্দোলনের প্রবক্তা, আমাদের দেশের চাষীদের নিয়ে প্রাণপাত করা, আমাদের “সরল সিধা মানুষ”দের দাবার গুটি বানিয়ে চরম অবৈজ্ঞানিক এবং মধ্যযুগে পা বাড়ানো জ্ঞানপাপী দানবকে কে রগড়াবে? অভিজিৎ রায়দের এতোদিনের লেখালেখি, অর্জন এবং যার জন্য অভিদা কাজ করে গেছে, সেই বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচারের আর প্রসারের মানুষগুলোর সরাসরি এগিয়ে এসে এই লোককে তত্ত্বগতভাবে একটু “শহীদ” করা দরকার। আশা করি বিজ্ঞানের পদতলে এভাবে “শহীদ” হতে ফরহাদের মতো অন্য মুক্তচিন্তার সভ্য মানুষদের আপত্তি হবেনা।

#‎IamAvijit‬ ‪#‎WordsCannotBeKilled‬  

মূল লেখার লিঙ্ক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন