বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৪

২০১৪:বিষণ্ণতার দিনলিপি-১

আজ ২০১৪ সালের প্রথম দিন। ইনফ্যাক্ট, প্রথম রাত। ঘটনাহীন, পারম্পর্যহীন, তাৎপর্যহীন একঘেঁয়েমিতে একটা বছর কাটানো। খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলাম আমার গত ৩৬৫ দিনের অর্জন কী? আসলেই কী?

কিছু খুঁজে পেলাম না। নতুন কিছু বই পড়েছি, বিষণ্ণ করেছে আরও, কখনো বিরক্ত। ঝুম্পা লাহিড়ীর লোল্যান্ড হ্যাস টু টপ দ্য লিস্ট। মনে রাখার মতো, নাড়িয়ে দেবার মতো সিনেমার কথা এ মুহূর্তে মনে আসছে না- খুব ভালো কোন খবর উদ্বেলিত করেছে– এমনটাও বলতে পারছিনা।

লেখার খাতায় ধূলো আর কলমে মরিচা- দুইই সম্বল ছিলো বছরভর। ডিপ্রেশন মানুষকে কীভাবে কুরে কুরে খেয়ে ফ্যালে ভেতরে ভেতরে তা টের পেয়েছি। ব্যক্তিগত সম্পর্কও আগের মতোই, ঘটনাবিহীন, তাৎপর্যবিহীন- হয়তোবা আগের বছরের থেকে আরও একটু খারাপ। নয়তোবা আগের মতোই। এই ঘষটে ঘষটে আর ঘষতে ঘষতে টেনে যাওয়া বছরটায় যা কিছু ভালো ছিলো, সবি বহিরঙ্গের, অন্তরঙ্গের রঙিন জাফরি কাটা কাচমেলানো বাতিতে আলো ঠিকরোতে পারেনি।

আজ জোর করে , অনেকটা নিজেকে নিয়ে যুদ্ধ করে লিখতে বসলাম। নিউ ইয়ার রেজ্যুলুশন করে যখন কিছু হবেনা ভাবছি, তখন ছোটখাটো দু’য়েকটা কাজ পরিবর্তিত করে, নিজের অভ্যেসগুলোকে পালটে ফেলে, আলস্য ঝেড়ে ফেলতে পারি কিনা দেখা যাক্‌!

এবছরটায় ভাবছি নিয়মিত লিখবো। প্রতি বছর ভাবিনা, সত্যিই ভাবিনা। এবছর ভাবছি, দেখা যাক্‌ কী হয়। লেখার এতো এতো বিষয় মাথায় জমে আছে যে মাঝে মাঝে মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ইস্‌স্‌, কথাটা কীরকম সোনার পাথরবাটি হয়ে গ্যালো। কিন্তু আসলেই। এতো চিন্তা করি, দশটা চিন্তা জট পাকিয়ে গিয়ে মাথায় গোলমাল লেগে যায়। ফেইসবুক এসে মনঃসংযোগের চোদ্দটা বাজিয়েছে এবছর। বিশেষতঃ ফেব্রুয়ারির শাহবাগ আন্দোলনের পরে একেবারে দু’বেলা ভাত খাওয়ার মতো নিত্যকার জিনিস হয়ে গেলো এই সোশ্যাল নেটোয়ার্কিং সাইটটা। ঝগড়াঝাঁটি, তর্কবিতর্ক, কূটকাচালি সবকিছুই এক্সট্রিম টু দ্য পাওয়ার ইনফিনিটি ছিলো। কাছের কিছু মানুষের ছাগু হয়ে যাওয়া পর্যবেক্ষণ করলাম নীরবে। পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পেলাম, পেয়ে বিশেষ আনন্দিত হলাম না- ফেইসবুক ফ্রেন্ডকে জীবনে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলার কুফল হাড়ে হাড়ে টের পেলাম- একজন একটা গান লিখলো, গাইলও আমায় নিয়ে-দিয়ে, নতুন ফ্রেন্ড পেলাম একজনকে, দূরের বন্ধু, কিন্তু তাও বন্ধু তো। একাকী এবং নিঃসঙ্গতায় ধুঁকেধুঁকে মরার চেয়ে কিবোর্ড টিপে মনের কথা জানানোটাও বোধকরি মোর প্রেফারেবল। কী সব যাতা লিখছি! ওই যে বললাম, মাথায় জট পাকিয়ে গ্যাছে চিন্তা।

এই আরেকটা জিনিস খেয়াল করলাম। আগে ফোকাস যতটা থাকতো, এখন কনসেন্ট্রেশন আর ফোকাস দু’টোই খুব কম সময় থাকে। বীভৎস সব খবর দেখি, আবার পর মুহূর্তেই স্ক্রল করে অন্য খবরে চলে যাই, ডিসেন্সেটাইজড হয়ে গেলাম কীরকম চোখের সামনে। এটুকু হলফ করে বলতে পারি, ২০১২ সালে এতোটা ডিসেন্সেটাইজড ছিলাম না। অনুভূতিহীন, ভোঁতা, বোধশূন্য পাগলের প্রলাপ মনে হয় নিজের লেখাকে। এতোটা সেলফ লোদিং নিয়ে কি আর লেখালেখি হয়!

বছরের শেষে এসে দুম্‌ করে রানা ভাইয়াটা মরে গ্যালো। একটা সহজ সরল সিদেসাধা, সাতেপাঁচে না থাকা নিতান্ত ভালোমানুষ এ’রম করে চলে গেলে কি রকম যে লাগে! বর্ষা ফেইসবুক ছেড়ে দিলো, এখন ওর সাথে কালে ভদ্রে হয়তো যোগাযোগ হবে, হয়তো হবেও না। এমন ভাবে সচলের অনেকের সাথেই যোগাযোগের সুতো ছিঁড়েছে। কতক ইচ্ছেতে, কতক অনিচ্ছায়। সেগুলোও ২০১৩ তেই। সেসসা খাম্মু মরে গেলো, তা নিয়ে **লের ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নাকাটি আর ভণ্ডামি দেখলাম আম্মার ফেইসবুকে। আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে মানুষ নিজেকে কি করে এইভাবে সেল করে! আই ফিল সিক এর কথা বলতে গেলে- আর না বলি।

দিনশেষে,যা বাকী থাকে সেটুকু তুচ্ছ হাহাকার। শাহবাগ আন্দোলনটা না হ’লে কাদের মোল্লার ফাঁসি ইহজন্মে দেখে যেতে পারতাম না, সেটা অবশ্যই একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। তবে তাতে আমার ব্যক্তিজীবনে বিশাল কোন আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে, তা বলা যাবেনা। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো- অন্ততঃ এ বছরটায় সেই স্বস্তির দেখা যেন পাই –

“মৃত্যুরে কে মনে রাখে ?… কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায় শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ ??



(মনে হয় একদিন-জীবনানন্দ দাশ) 

২টি মন্তব্য: