[বুড়ি সোনা,এই লেখাটা তোর জন্য। শুধুই তোর জন্য। আমাদের সবার মাঝে সবার আগে ত্রিশ ছুঁয়ে ফেলা তোকে অনেক অনেক আদর আর চুমু ছাড়া দেবার মতো কিছুই আমার নেই যে! তোর "হয়েছে, তো কি হয়েছে" অথবা "বয়েই গেলো" জাতীয় জীবনবোধ এক সময় খুব প্রতিহত করার চেষ্টা করতাম,এখন বুঝি :ওটা আমারই সীমাবদ্ধতা ছিলো। নতমস্তকে এবং লজ্জিত মুখে (হ্যাঁ,তোর ভাষায় "রক্তাভা নিয়েই")স্বীকার করছি, মাঝে মাঝে "বয়েই গ্যালো" বলতে হয়! তুই পেরেছিস। দিদির বাড়ির ওই চতুষ্পদীকে সপাটে যে কথার চড় কষালি তাতে ত্রিশের অনেক নীচেও অনেকেই কুপোকাত!এগিয়ে যা,জোর কদমে!]
===============================
পঁচিশ বছর অবধি একটিও নারী শরীর ছোঁওনি বলে
তোমার যে আত্মশ্লাঘা
তাকে স্রেফ বেকুবি না নির্বোধের আস্ফালন কোন্ টা বলবো এই নিয়ে যখন ভেবে জেরবার হচ্ছি
ঠিক তখনি
ত্রিশ বছরে আমার কতগুলো শরীর ঘাঁটা হয়েছে
সেই পরিসংখ্যানে উৎসাহী লোকের সংখ্যা
পার্টিতে দাঁড়িয়ে গেলো দ্বিগুণ!
জানি,ভালো মতই জানি -
কেচ্ছা,তা নুন-লঙ্কা -তেল -মশলাদারই হোক
কি স্রেফ একটু জল দিয়ে সেদ্ধ,
কেচ্ছাই।
বিশেষতঃ নারী হয়ে শরীর নিয়ে খোলাখুলি কথা
উপভোগের বিস্তারিত
অথবা যৌন নিষেধগ্রস্ত নই যে আদৌ
সেই আত্মোপলব্ধি
স্বস্তি এবং শান্তি দিচ্ছিলো না কাউকেই।
এক গা গয়না পরা মধ্যবয়সী শাড়ী গোছানো রমণী
কিম্বা খালাম্মা,যার জরায়ু অপসারণের পর
"নারীত্ব" হারানো নিয়ে খসখসে গলার স্বরে তিক্ততা ছাড়া আর বেশি কিছু বের হয়না
সাতেপাঁচে না থাকা ভদ্র যুবক,যে নারী পুরুষ কচকচি না শুনে
টিভির সাউন্ড বাড়াতে একটু উসখুস
অথবা নুরুর রহমান- নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য সব মহিলার
মুখ বাদে সরাসরি বুকের দিকে তাকিয়ে যিনি কথা বলতে পছন্দ করেন
সকলেই থমকে গেলো।
নির্ দ্বিধায় বলি,হ্যাঁ,ত্রিশ বচ্ছরে ত্রিশটির ও বেশি পুরুষ ছুঁয়েছি আমি।
কি আসে যায় তাতে?
আমরা কে কতজনের সঙ্গে "শুয়েছি" অথবা "শুইনি"
[যদিও এই শব্দাবলী গরম লোহা বা সীসার মতই অনেকের কানে]
তা দিয়ে আদৌ আমাদের সংজ্ঞায়ন হয় কি?
তা যদি হতো
তাহলে কেন বলুন,
দু'বেলা নমাজ পড়ে কপালে কালো টিপ সহ
গোড়ালির ওপর লুঙি ওঁচানো আখলাস সাহেব
ছোট্ট কাজের ছেলেকে দিয়ে স্পর্শ করান নিজের অণ্ডকোষ
নিজের "ভালোমেয়ে"র সুনাম রাখতেই হবে এমন মরণপণ করে প্রতিরাতে উপোষী শরীরে
নপুংসক স্বামীর গায়ে হাত বোলায় ফুপিমণি
অথবা চল্লিশ পরুনো ওই রমণী যে প্রতি দুপুরে চুপিচুপি
জানলার ফাঁক দিয়ে প্রতিবেশী তরুণের নগ্ন জলকেলি
দ্যাখে বিস্ফারিত নয়নে
এদের সবাই কে এক কাতারে রেখে
সব আগল খুলে দিয়ে
নিজের শরীর আর মনকে একবার আদুল করতে বলুন দেখি!
দেখি একবার আমদের নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি করা
টেবিলের পায়ায় পাজামা পরানো ভিক্টোরিয়ান শালীনতা
কোথায় থাকে?
আমাকে হরে দরে বেশ্যা বলে গাল দেবার আগে
বেশ্যা বাড়ি গমনোন্মুখ লোভার্ত সব পুরুষ
আর শরীর শরীর ছোঁকছোঁকানিতে
অবরুদ্ধ আর অবদমিত ভার্যা ও ভগিণীগণ
পৃথিবীটা সাদা আর কালো নয় - এটা মনে রাখাটা খুব জরুরী।
নীলচে ছাই ধূসর গেরুয়া পাঁশুটে হলদেটে মাখনরঙা
আরও কত শত স্তর আছে রঙের, বোধের
আপনাদের নিষেধ মানা দরজা বন্ধ করা
সপাট জোরে কপাট আটকানো শরীর আর মনেরও।
আমি না হয় হলামই একটু টলোমলো
যতগুলো ইচ্ছে নাহয় ছুঁলামই শরীর
তাতে কার কি এলো গেলো?
পিওর মনোগ্যামিস্ট ওই ভদ্রলোকের যিনি ল্যাপটপ খুলে
দশটা বিজ্ঞান গবেষণা গুলে খেয়ে
আমার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে পারেন?
আর দেখিয়ে দিতে পারেন আসলে আমার "বিকৃতি" জেনেটিক?
দুরছাই এই প্রজন্মান্তরের গবেষণা
দুয়ো দিচ্ছি তোর একগামিতাকেও
আরও বড় ধিক বছরে শতবার বেশ্যাবাড়ি গমন করেও
বহুগামী পুরুষের পিতৃত্বের অহঙ্কার
আর হাতে তুড়ি বাজিয়ে "বাজারের মেয়ের" বাজারমুখিতা যাচাইয়ের
ভালোবাসা নিয়ে ,না ,আমি কথা বলবো না আপনাদের সাথে -
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ
আপনার দুরন্ত স্মার্ট চুরুটের টান অথবা আধা ইংরেজ বুলি
না পেরেছে আপনার স্ত্রীর শরীর থেকে কালো নেটের সিল্কের আড়ালে ছ্যাঁকার দাগ গুলো ঢাকতে
পারেনি আপনার সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ পুত্রের
ইতঃস্তত হস্তমৈথুনের বালখিল্য লুকোতেও।
সদ্যবিবাহিতা আগুনরঙা আঁচে রূপসী আপনার কন্যাটিও মাসীমণি,
জীবনের আল ধরে হাঁটেনি এ অব্দি
তাই কামাতুরা কবুতরের ধুকপুক বুকে নিয়েই
স্বামীগর্বে মাথায় চওড়া সিঁদুরে ডগমগ খুশি সে।
অপালামাসী, গান্ধারীর মতো ইচ্ছা অন্ধত্ব ও তো পারেনি
আপনার আর মেসোর অসম্ভব শীতল জীবনে
দু'চারটে উষ্ণ জলের টুপটাপ ফোঁটা দিতে।
তাহলে কেন,কেন বলুন - সকল হিংসা,সব ঘৃণা
আর বিদ্বেষের তীর আমার দিকেই তাক্?
আমি ত্রিশ নামক মাইলস্টোন আজ স্পর্শ করলাম বলে?
কেন অন্য আরো দশজনের মতো জীবনের একঘেঁয়েমিতে অভ্যস্ত নই,তাই?
নাকি ওই বয়েই গ্যালো - বেশ করেছি শব্দাবলীই আপনারা হজম করতে পারেন না,কোন্ টা?
পাগলের মতো, উন্মাদ ভালো আমিও বেসেছি
ভেঙে যখন চুরমার হয়েছি তখন
সমবেত সুধীমন্ডলী
এই আপনাদের মুখনিঃসৃত সমবেত চুক্চুক্,
উহু আহা বড় দুখী মেয়ে, আহা ওকে আগলে রেখো
জীবন শেষ হলো
ইত্যকার নান বাক্যবাণে আমাকে খামচে,জাপটে, থেঁতলে
কতভাবেই না পিষতে চেয়েছেন আপনারা।
তাহলে আজ?
আজ তো আপনাদের খুশি হবার কথা
আপনাদেরই সেই অবলা বালিকা
মুখে দুধের গন্ধ আর শরীরে সদ্য ফুটে ওঠা স্তনের কুঁড়ি
এই দুইয়ের স্তর বহু আগেই পেরিয়ে এসে
মনে না হোক শরীরে খুশি অন্ততঃ?
তাহলে কি এই সত্যি অর্ফিয়ুসের বাজনার মতো
কারো স্পর্শে যদি উচাটন হয় শরীর
মন হলে ক্ষতি নেই- মনের বেসাতি খুব
মূল্যহীন বলছেন, আপামর শোতৃগণ?
মন নিয়ে যতটা আহা উহু করা যায়
শরীর নিয়ে ততটা নয়, শরীর নিয়ে কেবল
কেচ্ছাই জমে ভালো -
হাজার খানেক ওয়াটের বাল্বের আলোতেও
এ আঁধার দূর করি কি করে?
অবশেষে বলি:
ব্রহ্মান্ডের সবচেয়ে বড় ক্ষত তবে হৃদয়ে নয় , শুধুই শরীরে?
হৃদয় মূল্যহীন শরীর তামাম
শুধরোবে এই বিভাজন কেউ -
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ
ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮। রাত: ১২টা ৩৬ মিঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন