মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

সংখ্যাগুরুর ধর্মানুভূতি

বাংলাদেশের সংখ্যাগুরুর ধর্মানুভূতিতে আঘাত না হানার জন্য আমরা চোখ বুঁজে নানাধরনের অত্যাচার সহ্য করে যাই।ফেইসবুকের ওয়ালে হাজারবার কলেমা শেয়ার করে কেউ পুণ্য কামাতে চায়,আমরা চুপ থাকি।বিড়ালের গায়ে,পরোটার গায়ে আল্লা-রাসুলের নাম ভেসে উঠতে থাকে,চোখে ঠুলি পরা কিছু মানুষ সেগুলো পুণ্যের আশায় শেয়ার করতে থাকে,আমরা চুপ থাকি। প্যালেস্টাইনে “মুসলিম” বাচ্চা মারা গেলে কারো প্রাণ কেঁদে ওঠে,খোদার আরশ কেঁপে উঠবে বলে অভিশাপ দেয়,আমরা সম্মান জানিয়ে চুপ থাকি।সেই একই লোক আমেরিকার স্কুলে অনেকগুলো বাচ্চাকে গুলি করে খুন করে ফেলার সাফাই গায়,“খ্রীষ্টান-ইহুদি বাচ্চা মরেছে বেশ হয়েছে ওরা তো ইরাক-আফগানিস্তানে আমাদের মুসলিম বাচ্চাদেরও খুন করেছে,”আমরা এবারও চুপ থাকি। সারাজীবন সাধারণ বাঙালী কাপড়জামা পরা কেউ হঠাত হিজাবী হয়ে ইসলামী পোশাক নিয়ে অতিরিক্ত জ্ঞান প্রদানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,আমরা পোশাক তার ব্যাক্তিস্বাধীনতা বিবেচনায় চুপ থাকি। সেই একই মানুষ অন্যদের পোশাক কত খারাপ,কি কি ঘাটতি আছে ধর্মানুযায়ী সেটা বাছতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমরা তাকে এড়িয়ে যেতে চাই,কিন্তু চুপ থাকি। বিদেশে সম্পূর্ণ হারাম সংস্কৃতিতে জীবন যাপন করে হালাল খাবার নিয়ে চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি করার পরও আমরা চুপ থাকি। যেকোনো ভাবে, যেকোনো উসিলায়, যেকোনো কিছুর মধ্যে ধর্ম ঢুকিয়ে ফেলার পরও আমরা তাকে চিৎকার করে বলিনা, যথেষ্ট হয়েছে এবার থামো। আমরা চুপ থাকি, চুপ থাকি, চুপ থাকি। এই অগণন চুপ থাকার সামষ্টিক যোগফল হিসেবে একদিন হিন্দুদের জ্বালানো হয়, বৌদ্ধদের জ্বালানো হয়, আদিবাসীদের জ্বালানো হয় এবং সংখ্যাগুরুর ধর্মানুভূতির বীভৎসতা প্রকট থেকে প্রকটতর হতে থাকে।ধর্মানুভূতি ধর্মান্ধতায় পরিণত হবার আগেই সোচ্চার হবো, নাকি চুপই থাকবো?

২টি মন্তব্য:

  1. হায় রে সংখ্যাগুরু! আমার এত বছরের জীবনে শোনা নোংরাতম শব্দগুলোর একটা হলো সংখ্যালঘু। আমি জানি না এই ভেদাভেদ কবে বা আদৌ শেষ হবে কি না। একজন মানুষকে ভালো এবং মন্দ ছাড়া অন্য যেকোনো কিছু দিয়ে আলাদা করতে চাওয়ার এই প্রচেষ্টা আমি একদমই মানতে পারি না।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. নারে ভাই, ভেদাভেদ কি আর শেষ হবে!মানুষের ভেদাভেদের অনেকটাই আমি মেনে নেই। যেমন ধরুন নারী-পুরুষ, সমকামী-বিষমকামী, ইভেন শেতাঙ্গ-অশেতাঙ্গও ইচ্ছে না হলেও মেনে নিতে হয়। কিন্তু একই দেশে বসে ধর্মগুরু আর লঘুর এই অশ্লীল ভেদটা মানতে খুব কষ্ট হয়। ধর্ম কি আল্টিমেটলি? একটা সেট অফ বিলিফ বই তো কিছু না। সেটা এত নোংরা কেন হতে হবে? আর ইন জেনারেল আমার মনে হয় বাংলাদেশীদের পরমতসহিষ্ণুতা খুব কম। খুবই কম। এটা আমার অব্জার্ভেশন। অন্য জাতি ধর্মের লোকদের সাথে বহুদিন সহাবস্থান করে বলছি। নিজেরটা চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস মূলতঃ হীনমন্যতা থেকে আসে বলে আমার ধারণা।

      মুছুন