Life is what happens to you
While you're busy making other plans
এ কথাটা বহুবার শোনা,বহুবার বহুভাবে আনমনে ভাবা,তারপরও কেন জানিনা,আজ অনেকদিন পর জন লেননের এ কথাগুলোকে বড় অসময়ে সত্যি বলে মনে হচ্ছে। জীবন কতটা কঠিন,কতটা জটিল,কতটা পথ পেরিয়ে তবেই জীবনকে পাওয়া যায়,বোঝা যায় - এ সমস্ত কূটতর্ক দূরে রেখেও বলা যায়,এই যে রাত্তির একটায় আমার নির্ঘুম চোখ,আর পেটের খিদেতে যতটা নয়,চোখের আর মনের খিদেতে তার চেয়েও অনেক বেশি ঝালটক চানাচুর চিবোনো,মাঝেসাঝে নোনতা বিস্কুটে কুটুস কাটুস কামড় এই আপাতঃ সুখের বিভ্রম,আসলে সুখ নয় জেনেও সুখ ভাবা,এটাই জীবন।
তার মঝে হুউউশশ্ করে ছুটে চলা স্বপ্নচিন্তা,জুম জুম জুম গাঢ় লাল রঙের মাজদা থ্রি অথবা ভি-সিক্স,ছোট্ট উঠোনওয়ালা বাড়িতে বসে বিকেলের চায়ের সাথে রঙধনু দেখবার শখ,গল্প লেখার জন্য মাঝেসঝেই কোমর বেঁধে নামবার প্ল্যান,প্রাণীজ আমিষ পুরোপুরি বাদ দেবার চিন্তাভাবনা,ভালো একটু টাকাপয়সা জমিয়ে পৃথিবীটা ঘুরে দেখবার স্বপ্ন - শেষ পর্যন্ত স্বপ্নই। এর মাঝে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ঘটনা,হঠাৎ করেই পিচ্চিবেলার মতো আঁকিবুকি করা সুন্দর একটা কার্ড পাওয়া- সেই সুদূর ক্যানাডা থেকে কত মনে করে পাঠিয়েছে বোনটা- অথবা নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে পসামের কর্কশ খ্যাসখ্যাস আওয়াজ জানালার পাশে-এটাই আমার জীবন। আমার জীবনে অতটা রঙ নেই যতটা স্বপ্নে আছে,অতটা উচ্ছ্বাস নেই,যতটা স্বপ্নে দেখি। মাঝে মাঝে এই বর্ণহীন নিরুত্তাপ জগৎ থেকে খুব পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
খুব।
সাধ হয় হিন্দি সিরিয়ালগুলোর মত ভীষণ ঝাঁ চকচকে একটা বাড়িতে থাকি। চাকরবাকরপাইকপেয়াদাখানসামাবরকন্দাজ সব থাকুক। খুব সুন্দর শাড়ি-কাপড় গয়নাগাটি পরে ঘুরে বেড়াবো। জীবনের একমাত্র সমস্যা হবে কোন রঙের জামার সাথে কোন্ নেইলপলিশটা ম্যাচ হবে। আজ কি ফুচকা খেতে যাবো না'কি কেএফসি'র চিকেন? মাঝে মাঝে একটু গম্ভীর জিনিস নিয়েও ভাববো। কিন্তু সেগুলোর দৌড় হবে শাশুড়ি হলে তাকে মা,আম্মা না মামণি বলবো অব্দি। বরের অথবা বয়ফ্রেন্ডের সাথে অর্থহীন কথার প্যাঁচ কষবো,কোনো আপাতঃ কারণ ছাড়াই অতিমানবীয় একটা টেনশন তৈরি হবে,আবার খুব তুচ্ছ ও ফালতু কারণে সেটা ঠিকও হয়ে যাবে। টাকাপয়সা কোনো সমস্যাই হবেনা,কক্ষনো না। কারণ হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের জীবনে টাকা জিনিসটার যে একটা মূল্য আছে,তা কস্মিনকালেও মনে হয়না। আবার মনে হয় অফিসে কাজ করবো,বাই ডিফল্ট অবশ্যই বস বা বসের খুব কাছের কোনো মানুষ হবো। চাই কি অধঃস্তনদের ওপর যেকোনো সুবিধে নেবো,যখনতখন যা ইচ্ছে আবদার করবো,একদম মামাবড়ির মতই আহ্লাদে ন্যাকামিতে গলে গলে পড়বো। বিশেষতঃ সুন্দরী মেইকআপ দেওয়া ইম্যাকুলেট লুক মেইনটেইন করলে তো আরো পোয়াবারো। জীবনে সত্যিকারের কোনো সমস্যা থাকবেনা,যেগুলো থাকবে সেগুলো সবই প্লাস্টিক সমস্যা হবে। জীবনটাও প্লাস্টিক জীবন হবে। স্টেপফোর্ড ওয়াইভস এর মতো বরও খুশ্ আমিও খুশ্!
কিন্তু নিজের জীবনটাকে যতই দেখি,বুঝতে পারি সে বেচারা বড়ই ইকো ফ্রেন্ডলি। প্লাস্টিক জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের শত তরিকা জানা থাকার পরও ভীষণই মাটির কাছে তার বাস। মাটির সানকি,কলস ঠোকর খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যে কান্নাটা কাঁদে,প্লাস্টিক কাপ-গ্লাসের ঠোঁট বাঁকানো হাসি তাকে অবজ্ঞাই করে যায় শুধু। বেচারা আমার জীবনটার আর কসমোপলিটান হওয়া হয়ে ওঠেনা। জীবন মানে এককালে জানতাম আনন্দ আর খুশি আর একটু বড় হবার পর জেনেছিলাম উত্তেজনা শিহরণ প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়া আর নিজের বিশ্বাসের জন্য লড়াই করে যাওয়া। আজ,একটুও বুড়িয়ে না গিয়েও(থ্যাংকস টু রবিরুড়ো)সেই আনন্দটাকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছি। আজকাল মাঝেমধ্যেই মনে হয় শুধু নিরন্তর বয়ে চলাও জীবন। কিচ্ছু নেই।
টানাপোড়েন নেই, উত্তেজনা নেই।
ঝগড়া নেই,তক্কোবিতক্কো চলছে না। সুখের আতিশয্য নেই। সবচাইতে ভয়ের কথা হলো দুঃখের তীব্রতাও ম্রিয়মান।
জীবন শুধু একঘেয়ে দিনযাপনের গ্লানিতে পরিণত হয়েছে। হচ্ছে।
অনেকদিন আগে রুমি ভাইয়ের সাথে একটা আলাপে উনি বলেছিলেন যে সত্যিকারের দুঃখ না পেলে নাকি মানুষ হওয়া যায়না। ভালো মানুষ হতে হলে অনেক দুঃখ পেরিয়ে তবেই হতে হয়। বড্ড জানতে ইচ্ছে করে রুমি ভাই,ওই ভালো মানুষ হবার পাট চুকলে,তারপর কি? দুঃখ বেদনা জ্বালা যন্ত্রণা সব চুকবার পর কী? যদি তারপরে বেঁচেবর্তে থাকতে হয়, জীবনের মানে যখন ফুরায়ে যায়,তখন?
তখন কি এই ধূলিমলিন বহুচর্চিত অবিন্যস্ত জীবনকে হাতের মুঠোর ওমে পুরে নিয়ে বলতে হয়,"ভালো আছো তো সোনা?"
পড়ে অনেকখন থম মেরে ছিলাম। পরানের গহীন ভেতর থেকে উঠে আসা এই শব্দগুলো খুব পরিচিত চোখে তাকাল আমার দিকে। আমিও তাকিয়েই চিনলাম। ওদের সাথে আমারো দেখা হয়ে গেছে কিছুকাল আগেই।
উত্তরমুছুনজীবন মানে তাই অর্থহীন একটা কিছুর মানে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা। বারবার দেয়ালে মাথা ঠুকে বলা, আমি ভীষন জরুরি এই বিশ্বে, বিশ্বাস করো, আমি ভীষন জরুরি---
সত্যটা হল, আমরা কেউ নই।
ভাল থাকুন, আর জীবন নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা কইরেন না।
ওটা নিয়ে ভাবতে হয় না...।!!!
জীবন তো জীবনের মতই বয়ে চলে, তাইনা? তারপরও শুধু শুধু কষ্ট পাই কেন? চিন্তা কেন হয়? জানিনা।
উত্তরমুছুনদারুণ লেখা, দারুণ শিরোনাম বাছাই। কিন্তু আমার ইদানীং মনে হয় জীবন তো খানিকটা হলেও আমরাই তৈরি করি...বাছাই-ও করি..তৈরি করার সময় হয়তো জানিনা যে শিব গড়তে গিয়ে বাঁদর গড়ছি কিনা..তৈরি হবার পর দেখি, তিল তিল করে যা গড়লাম, তা-তো আমার আরাধ্য ছিলোনা! তখন আর ফিরবার পথ থাকেনা। তখন আর ফেরা হয়না। এই ক্লান্তি, কিংবা ম্যাড়মেড়ে অভ্যস্ততা, এই ধূলি ধূসরতা, সে তো আমার-ই অর্জন। তখন আর এমনকি জীবনকে পরম মমতায় হাতের মুঠোর ওমে পুরতেও ইচ্ছা হয় না।
উত্তরমুছুন